 সার্চ করুন
                                    সার্চ করুন
                                পুষ্টি মূল্য
ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশী। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমানে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন "এ" থাকে।
ব্যবহার
ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরূত্ব রয়েছ। শুধু পশু, মুরগির খামার ও মাছের চাহিদা মিটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন ভুট্টা দানা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ভুট্টার জমি দ্রুত বাড়ছে।
উপযুক্ত জমি ও মাটি
বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে।
জাত পরিচিতি
ভুট্টার জাত সংগ্রহ ও বাছাই করনের মাধ্যমে বিএআরআই আজ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটাতে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী ভুট্টা জাতের চাষের সম্ভবনা খুবই উজ্জ্বল।
 
ভুট্টার জাত
বর্ণালী:
স্থানীয় জাতসমূহের চেয়ে বর্ণালী জাতের গাছের উচ্চতা বেশী। এ জাতের মোচা আকারে বেশ বড় এবং আগার দিক কিছুটা সরু। মোচার অগ্রভাগ পর্যন্ত শক্তভাবে খোসাদ্বারা আবৃত থাকে। বর্ণালীর দানা সোনালী হলদে রংয়ের এবং দানা আকারে বেশ বড়। হাজার দানার ওজন ২৪৫-৩২০ গ্রাম। এ জাতটি রবি মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০০ দিনে পাকে। ফলন প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ৫.৫-৬.০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৪.০-৪.৫ টন হয়। বর্ণালী জাতে বেশী পরিমানে ক্যারোটিন আছে বলে এর দানা হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরির একটি উত্তম উপকরণ।
শুভ্রা
স্থানীয় জাতের চেয়ে শুভ্রা জাতের গাছের উচ্চতা বেশী। শুভ্রার দানা আকারে বড় এবং সম্পূর্ণ মোচা দানায় ভর্তি থাকে। হাজার দানার ওজন ৩১০-৩৩০ গ্রাম। এ জাতটির গাছের উপরের অংশের পাতা নিচের অংশের পাতার চেয়ে আকারে ছোট এবং অপেক্ষাকৃত সরু। জাতটি রবি মৌসুমে ১৩৫-১৪৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিনে পাকে। পরিপক্ক অবস্থায় মোচা সংগ্রহ  করলে প্রতি হেক্টরে ৫০-৫৩ হাজার মোচা পাওয়া যায়। ফলন প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ৪.০-৫.৫ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৩.৫-৪.৫ টন হয়। দানার রং সাদা বলে গমের আটার সাথে মিশিয়ে রুটি তৈরি করা যায়।
খইভুট্টা
গাছ মাঝারি উচ্চতা সম্পন্ন, মোচার উপরের পাতা অপেক্ষাকৃত সরুএবং দানা আকারে ছোট। হাজার দানার ওজন ১৪০-১৫০ গ্রাম। খইভুট্টা রবি মৌসুমে ১২৫-১৩০ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯০-১০০ দিনে পাকে। ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ৩.৫-৪.০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ২.৫-৩.৫ টন হয়। খইভুট্টার দানা থেকে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ খই পাওয়া যায়। খই আকারে বেশ বড় ও সুস্বাদু।
মোহর
মোহর জাতের গাছ অন্যান্য জাতের গাছের চেয়ে বেশ উঁচু, ফলে খড়ের পরিমান বেশি হয়। এ জাতের মোচা পাকার পরেও পাতা বেশ সবুজ থাকে বলে পাতা উৎকৃষ্ট গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মোহর জাতের কান্ড শক্ত হওয়ায় বাতাসে সহজে হেলে পড়ে না। মোচা মোটা,লম্বা এবং সম্পূর্ণ মোচা দানায় পূর্ণ থাকে। দানা উজ্জ্বল হলুদ এবং আকারে বড়। হাজার দানার ওজন ১৮০-৩০০ গ্রাম। মোহর জাতটি দানা এবং গো-খাদ্য উভয় উদ্দেশ্যে চাষ করা যেতে পারে। জাতটি রবি মৌসুমে ১৩৫-১৪৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিনে পাকে। ফলন হেক্টরপ্রতি রবি মৌসুমে ৫.০-৫.৫ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৩.৫-৪.৫ টন হয়।
বারি ভুট্টা-৫
জাতটি বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ উপযোগী এলাকায় চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত বলে প্রমানিত হয়েছে। গাছ সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির মোচা বেশ লম্বা ও মোটা এবং সম্পূর্ণভাবে খোসাদ্বারা আবৃত। এ জাতের দানার রং হলুদ এবং হাজার দানার ওজন ২৯০-৩১০ গ্রাম। এ জাতের জীবনকাল ১৩৫-১৫৫ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ৬.০-৬.৫ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৩.৫-৪.০ টন হয়।  
বারি ভুট্টা-৬
রবি মৌসুমে এ জাতের জীবনকাল ১৪৫-১৫০ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিন। এ জাতের মোচা খোসাদ্বারা ভালভাবে আবৃত থাকে। মোচা মাঝারি আকারের। হাজার দানার ওজন ৩১৫-৩২৫ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ৬.৫-৭.০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৫.০-৫.৫ টন পাওয়া যায়।
বারি ভুট্টা-৭
এ জাতের গাছগুলো বেশ সবল, মোটা ও শক্ত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। মোচা বেশ বড় আকারের এবং মোচার অগ্রভাগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ খোসা দ্বারা আবৃত থাকে। গাছের উচ্চতা  গড়ে ১৯০-১৯৪ সেমি। দানাগুলো হলুদ, ডেন্ট আকৃতির এবং আকারেও বেশ বড়। হাজার দানার ওজন ৩৬০ গ্রাম। রবি মৌসুমে এ জাতের জীবণকাল ১৫৪-১৫৫ দিন এবং খরিফে ১০০-১০৫ দিন। হক্টেরপ্রতি গড় ফলন রবি মৌসুমে ৬.০-৭.০ টন এবং খরিফে ৫.০-৬.০ টন পাওয়া যায়।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১
জাতটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় উৎপাদনের উপযোগী। জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৩৫-১৪৫ দিন ও খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিন। জাতটির দানা বেশ বড়, রং হলুদ। মোচার অগ্রভাগ ভরাট। এ জাতের গাছের উচ্চতা ১৯০-২১০ সেমি। হাজার দানার ওজন ৫৭০-৫৮০ গ্রাম। জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি ৮.০-৮.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-২
এর গড় ফলন বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১ এর চেয়ে বেশী। মোচার আকারও বেশ বড় এবং মোচার অগ্রভাগ সম্পূর্ণভাবে খোসা দ্বারা আবৃত থাকে। দানার আকার কিছুটা বড় এবং হাজার দানার ওজন ৩৫৬ গ্রাম। গাছগুলি সবল এবং পাতা বেশ চওড়া আকারের। রবি মৌসুমে ফলন প্রতি হেক্টরে ৮-৯ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৭-৭.৫ টন। এ হাইব্রিড জাতটি রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন ও খরিফে ১০০-১০৫ দিনে পরিপক্ক হয়।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৩
জাতটির সিঙ্গেল ক্রস হাইব্রিড এবং ফলন ক্ষমতা বারি হাইব্রিড ভুট্টা-২ এর চেয়ে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ বেশী। গাছগুলি বেশ সবল ও সতেজ। গাছের উচ্চতা রবি ও খরিফ মৌসুমে যথাক্রমে ২২০-২৩০ এবং ১৫০-১৬০ সেমি। পাতাগুলো চওড়া ও খাড়া। কান্ড মোটা ও শক্ত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির মোচা মোটা ও লম্বা। মোচার অগ্রভাগ খোসা দ্বারা শক্তভাবে আবৃত থাকে। দানার রং হলুদ, ফ্লিন্ট আকৃতির। হাজার দানার ওজন ৩৯২ গ্রাম। জাতটির ফলন রবি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ৯.৫-১০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৭.০-৭.৫ টন। রবি মৌসুমে এই জাতটির জীবনকাল ১৪৬-১৫০ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ১২০-১২৫ দিন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৪
গাছের উচ্চতা ১৯০-২০০ সেমি। দানা হলুদ ও ফ্লিন্ট আকৃতির। হাজার দানার ওজন ৩৪৯ গ্রাম। মোচার অগ্রভাগ সম্পূর্ণভাবে খোসা দ্বারা আবৃত থাকে। এ জাতটি টারসিকাম লিফ ব্লাইট (ঞখই)  রোগের ক্ষেত্রে মধ্যম প্রতিরোধী।  জাতটির ফলন রবি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি গড়ে ৭.৩৭ টন। রবি মৌসুমে গড়ে ১৪৩ দিনে এবং খরিফে ১১৫ দিনে পরিপক্ক হয়।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫
সাধারণত গাছের গড় উচ্চতা রবি ও খরিফ মৌসুমে যথাক্রমে ১৯৫-২০০ সেমি এবং ১০০-১১৫ সেমি। মোচা আকারে বড় ও অগ্রভাগ পর্যন্ত শক্তভাবে খোসা দ্বারা আবৃত থাকে। দানার রং কমলা হলুদ এবং মাথায় কোন গর্ত নেই অর্থাৎ ফ্লিন্ট টাইপ। হাজার দানার ওজন ৩২৫-৩৩০ গ্রাম। ফলন হেক্টরপ্রতি ১০.০-১০.৫ টন। এই জাতটিতে উচ্চ গুণগত মানের আমিষের পরিমান বেশী থাকাতে হাঁস মুরগীর খাবারে আলাদাভাবে ট্রিপটোফেন ও লাইসিন দিতে হয় না।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৬
প্রতি মোচায় বীজের সংখ্যা ৭০০-৭৮০ টি। দানা হলদে রঙের। ফলন রবি মৌসুমে  প্রতি হেক্টরে ৯.৮-১০.০ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭
প্রতি মোচায় বীজের সংখ্যা ৭০০-৭৮০ টি। দানা উজ্জল হলদে রঙের। জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৩৩-১৪১ দিন। ফলন রবি মৌসুমে  প্রতি হেক্টরে ১০.৫-১১.০ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৮
প্রতি মোচায় বীজের সংখ্যা ৭০০-৭৮০ টি। দানা আকর্ষণীয় হলদে রঙের। জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪২-১৪৬ দিন। ফলন রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৯.৭০-১১.৫০ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯
দানা আকর্ষণীয় কমলা রঙের। ফলন রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ১০.২০-১২.০ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০
প্রতি মোচায় বীজের সংখ্যা ৭০০-৭৮০ টি। দানা হলদে রঙের। জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন। ফলন রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৯.০০-১১.৫০ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১
জাতটি তুলনামূলকভাবে খাটো। জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৭-১৫৩ দিন। ফলন রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৯.৫০-১১.৫০ টন।
বারি মিষ্টি ভুট্টা-১
এ ভুট্টা সবজি হিসেবেও খাওয়া যায়। আবার মাছ, মাংস প্রভৃতি সুপের সাথে মিশিয়ে অথবা স্নাক্সের উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। মিষ্টি ভুট্টা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। তাই দানা যখন অল্প নরম থাকে তখনই মোচা সংগ্রহ করতে হয়। বপনের মাত্র ১১৩-১১৯ দিনে খাওয়ার উপযোগী কচি মোচা গাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়। তবে মাঠ থেকে সংগ্রহের পর পরই যদি দানা না খাওয়া যায় অথবা প্রক্রিয়াজাত বা হিমায়িত নাকরা হয় তবে মিষ্টি ভুট্টার স্বাদ ও গুণাগুণ কমে যায়। কচি দানায় চিনির ভাগ ১৮%। হলুদ দানা প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ (ক্যারোটিন) সমৃদ্ধ। জাতটি হেলে পড়া প্রতিরোধী এবং মোচার অগ্রভাগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ খোসা দ্বারা আবৃত থাকে। জাতটির ফলন প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ৯.৫-১০.৫ টন (খোসা ছাড়ানো কচি মোচা) এবং সবুজ গো-খাদ্য হিসেবে ২৪ টন/হেক্টর পাওয়া যায়।
বপনের সময় ও বীজ হার
বাংলাদেশে রবি মৌসুমে মধ্য-আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমে ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারী-মার্চ) পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। লাইন থেকে লাইন এর দূরত্ব ৭৫ সে.মি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সে.মি। একর প্রতি বীজের হার ১০-১২ কেজি (খই ভুট্টার ক্ষেত্রে ৬-৮ কেজি)।
সার ব্যবস্থাপনাঃ ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের পরিমান নিচে দেওয়া হলোঃ
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরীর শেষ পর্যায়ে অনুমোদিত ইউরিয়ার এক তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে জমি চাষ দিতে হবে। বাকি ইউরয়া সমান ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানোর ৪০-৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। উদ্ভাবিত জাতে নিম্নরূপ ৩-৪টি সেচ দেওয়া যায়।
প্রথম সেচ      -বীজ বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে (৪-৬ পাতা পর্যায়)
দ্বিতীয় সেচ    -বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে (৮-১২ পাতা পর্যায়)
তৃতীয় সেচ    -বীজ বপনের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে (মোচা বের হওয়া পর্যায়)
চতুর্থ সেচ      -বীজ বপনের ৮৫-৯৫ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার পূর্ব পর্যায়)
ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোন ক্রমেই জমিতে যাতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।
পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা
ভুট্টার চারা অবস্থায় কাটুই পোকার আক্রমণ হলে হাত দিয়ে তা মেরে ফেলতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা
ভুট্টার বীজ পচা এবং চারা গাছের রোগ দমন
বীজ পচা এবং চারা নষ্ট হওয়ার কারণে সাধারণত ক্ষেতে ভুট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায়। নানা প্রকার বীজ ও মাটি বাহিত ছত্রাক যেমন পিথিয়াম, রাইজোকটনিয়া, ফিউজেরিয়াম, পেনিসিলিয়াম ইত্যাদি বীজ বপন, চারা ঝলসানো, রোগ ও শিকড় পচা রোগ ঘটিয়ে থাকে। জমিতে রসের পরিমান বেশী হলে এবং মাটির তাপমাত্রা কম থাকলে বপনকৃত বীজের চারা বড় হতে অনেক সময় লাগে। ফলে এ সময়ে ছত্রকের আক্রমনের মাত্রা বেড়ে যায়।
প্রতিকার
১.    সুস্থ্য, সবল ও ক্ষতমুক্ত বীজ এবং ভুট্টার বীজ পচা রোগ প্রতিরোধী বর্ণালী ও মোহর জাত ব্যবহার করতে হবে।
২.    উত্তমরূপে জমি তৈরী করে পরিমিত রস ও তাপমাত্রায় (১৩μ সে. এর বেশী) বপন করতে হবে।
৩.    থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করলে ভুট্টার বীজ পচা রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়।
ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ দমন
 হেলমিনথোসপরিয়াম টারসিকাম ও হেলমিনথোসপরিয়াম মেইডিস নামক ছত্রাকদ্বয় এ রোগ সৃষ্টি করে। প্রথম ছত্রাকটি দ্বারা আমাদের দেশে ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ বেশী হতে দেখা যায়। হেলমিনথোসপরিয়াম টারসকাম দ্বারা আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে গাছের উপরের অংশে তা বিস্তার লাভ করে। রোগের প্রকোপ বেশী হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যায়। এ রোগের জীবানু গাছের আক্রান্ত অংশে অনেক দিন বেঁচে থাকে জীবাণুর বীজকণা বা কনিডিয়া বাতাসের সাহায্যে অনেক দূর পর্যন্ত সুস্থ্য গাছে ছড়াতে পারে। বাতাসের আদ্রতা বেশী হলে এবং ১৮-২৭ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় এ রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়।
প্রতিকার
১.    রোগ প্রতিরোধী জাতের (মোহর) চাষ করতে হবে।
২.    আক্রান্ত ফসলে টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩.    ভুট্টা উঠানোর পর জমি থেকে আক্রান্ত গাছ সরিয়ে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ভুট্টার মোচা ও দানা পচা রোগ দমন
 মোচা ও দানা পচা রোগ ভুট্টার ফলন, বীজের গুনাগুন ও খাদ্যমান কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি প্রভৃতি এ রোগ ঘটায়। আক্রান্ত মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে যায়। দানা পুষ্ট হয় না, কুঁচকে অথবা ফেটে যায়। অনেক সময় মোচাতে বিভিন্ন দানার মাঝে বা উপরে ছত্রাকের উপস্থিতি খালি চোখেই দেখা যায়। ভুট্টা গাছে মোচা আসা থেকে পাকা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বেশী থাকলে এ রোগের আক্রমণ বাড়ে। পোকা বা পাখির আক্রমনে বা কান্ড পচা রোগে গাছ মাটিতে পড়ে গেলে এ রোগ ব্যাপকতা লাভ করে। এ রোগের জীবাণু বীজ অথবা আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। একই জমিতে বার বার ভুট্টার চাষ করলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
১.    এ রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে একই জমিতে বার বার ভুট্টা চাষ করা ঠিক নয়।
২.    জমিতে পোকা ও পাখির আক্রমন রোধ করতে হবে।
৩.    ভুট্টা পেকে গেলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।
৪.    কাটার পর ভুট্টার পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ভুট্টার কান্ড পচা রোগ দমনঃ
বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি-এর কারণে এ রোগ ঘটে থাকে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গাছের কান্ড পচে যায় এবং গাছ মাটিতে ভেঙ্গে পড়ে। আমাদের দেশে খরিফ মৌসুমে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে। জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশী এবং পটাশের পরিমাণ কম হলে ছত্রাক জনিত কান্ড পচা রোগ বেশী হয়।
প্রতিকার
১.    ছত্রাকনাশক ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
২.    সুষম হারে সার ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে নাইট্রোজেন ও পটাশ পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
৩.    ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৪.    শিকড় ও কান্ড আক্রমকারী পোকা-মাকড় দমন করতে হবে।
৫.    আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ
দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে।
 
                                
উত্তর সমূহ